ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা
প্রচলিত ব্যবস্থায় কোনো কর্মীকে স্বশরীরে কর্মস্থলে গিয়ে কাজ করতে হয়। কিন্তু ইন্টারনেটের কল্যাণে এখন বিশ্বের যেকোনো দেশের যেকোনো কর্মী অন্য যেকোনো দেশের কর্মদাতার কাজ ঘরে বসেই করতে পারেন এবং তার কাজের পেমেন্ট অনলাইনেই গ্রহণ করতে পারেন। ফুল টাইম বা পার্ট টাইম যেকোনো ধরনের হাজার হাজার কাজ রয়েছে অনলাইনে। এর মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বায়ার এবং ওয়ার্কারগণ একই প্লাটফর্মে উপনীত হচ্ছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বায়ারগণ তাদের কাজগুলো সস্তায় অন্য দেশের কর্মীদের মাধ্যমে অনলাইনে করিয়ে নিচ্ছেন। অনলাইন মার্কেটপ্লেসের হাজার হাজার কাজ থেকে নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোনো কাজ খুঁজে নেয়া ও সেটি সম্পাদন করার পর বায়ারের কাছ থেকে তার পেমেন্ট গ্রহণ করার মাধ্যমে যে উন্মুক্ত পেশা বা ফ্রিল্যান্সিং কাজের সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে আউটসোর্সিং বলে। এর মাধ্যমে হাজার হাজার লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। দেশে আসছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি বিকাশের সাথে সাথে আমেরিকা, ইউরোপ কিংবা বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে প্রয়োজন দেখা দিচ্ছে বিপুল পরিমাণ ডেটা প্রসেসিংয়ের। যার ফলে উন্নয়নশীল দেশসমূহ আইসিটি এনাবল্ড সার্ভিসকে কাজে লাগিয়ে অর্জন করছে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন নয়, এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে দেশের বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষিত বেকার দক্ষ জনগোষ্ঠীর।
আউটসোর্সিং সংশ্লিষ্ট অপর জনপ্রিয় শব্দটি হলো ফ্রিল্যান্সিং। ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এর অর্থ হলো স্বাধীন বা মুক্তপেশা। নির্দিষ্ট কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে কাজ করা কে ফিল্যান্সিং (স্ব-উদ্যোগের কাজ) বলে। ফ্রিল্যান্সিং যারা করেন এ ধরনের পেশাজীবীকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার (Freelancer)। ফ্রিল্যান্সাররা চাকরিজীবীদের মতো বেতনভুক্ত নয় বরং কাজ ও চুক্তির উপর নির্ভর করে তাদের আয়ের পরিমাণ কম বা অনেক বেশি হতে পারে। তবে এ পেশায় স্বাধীনতা আছে, ইচ্ছেমতো ইনকামের সুযোগও আছে। আধুনিক যুগে বেশিরভাগ ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো ইন্টারনেট মাধ্যমে সম্পন্ন হয়ে থাকে। ফলে ফ্রিল্যান্সারগণ ঘরে বসেই তাদের কাজ করে উপার্জন করতে পারেন। বর্তমানে ছাত্র-ছাত্রী এবং অনেক চাকরিজীবী এই পেশায় আসছেন।
ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এখন একটি শিল্পে পরিণত হয়েছে। আউটসোর্সিং শিল্পকে কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশের শিক্ষিত বিরাট জনগোষ্ঠী এখন অর্থ উপার্জন করতে পারছে। বাংলাদেশ প্রতি বছর আউটসোর্সিং হতে কয়েক মিলিয়ন ডলার আয় করে। শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর অনেকেই এ শিল্পকে কাজে লাগিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও অনেকে এ খাতে বিনিয়োগ করছেন। ফলে বহু লোক সম্পৃক্ত হচ্ছে বিভিন্ন কাজে, সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। গ্লোবাল আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস বা জব শেয়ারিং ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে- ফ্রিল্যান্সার, আপওয়ার্ক, বিল্যান্সার, ফাইভার ইত্যাদি। আউটসোর্সিং বা অনলাইন মার্কেট প্লেসে কাজের ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, কপি রাইটিং, এফিলিয়েট মার্কেটিং, সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO), গেল অ্যাডসেন্স, ভার্চুয়াল অ্যাসিসটেন্স, রিসার্চ এন্ড সার্ভে, মার্টিক্যাল-ব্লগ রাইটিং, বিক্রয় ও বিপণন, ব্যবসা, সেবা ইত্যাদি।
তবে আউটসোর্সিং পেশাটি স্থায়ী এবং সামাজিকভাবে এখনও স্বীকৃত নয়। এখানে কাজ পাওয়ার ওপর অর্থ উপার্জন নির্ভর করে। ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো আপাতদৃষ্টিতে আকর্ষণীয় মনে হলেও পরিবার বিচ্ছিন্নতা তথা ভিন্নধর্মী জীবন যাপন এ কাজের বড় ধরনের একটি নেতিবাচক দিক। আউটসোর্সিং এর সকল কাজ যেহেতু অনলাইন-নির্ভর তাই নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট কানেকশন এর জন্য আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশে এমন নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া দুরূহ। এছাড়াও অনলাইন প্লেসে নানা ফ্রডিং ও স্প্যামিং-এর যন্ত্রণা এড়িয়ে যথাযোগ্য কাজ পাওয়া যেমন কঠিন তার চেয়েও কঠিন সেই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পারিশ্রমিক পাওয়া। সর্বোপরি রাত জেগে কাজ করা, দক্ষতা অনুযায়ী কাজ না পাওয়া, কাজের যোগান দিতে বাধ্য হওয়া-জনিত মানসিক চাপ, সরবরাহকৃত কাজের যথাযথভাবে মূল্যায়ন না হওয়া বা পারিশ্রমিক পরিশোধের ক্ষেত্রে নানাবিধ জটিলতার কারণে অনেকেই এ ধরনের কাজে নিরুৎসাহিত বোধ করে থাকেন।
Comments
Post a Comment