ঘুমের ব্যাঘাত জীবনের গুণগতমানকে ব্যাহত করে। দিনের পর দিন যদি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে, তবে নানাবিধ রোগের ঝুঁকি বাড়ে, মনোযোগ কমে যায়, অবসাদ আর ক্লান্তিবোধ গ্রাস করে।
প্রত্যেক মানুষের রাতে ৬–৭ ঘণ্টার নির্বিঘ্ন ঘুম দরকার। এই ভালো ঘুমের জন্য চাই একটি ইতিবাচক পরিবেশ এবং কিছু অভ্যাস গড়ে তোলা।
কিছু পরামর্শ
● প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যান এবং একই সময় ঘুম থেকে উঠুন। ছুটির দিনগুলোতেও ঘুমের একই রুটিন বজায় রাখুন।
● তরল খাদ্য সন্ধ্যার পর থেকে কমিয়ে দিন। ঘুমের অন্তত দুই ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে ফেলুন। তরল খাদ্যের আধিক্যে রাতে বারবার শৌচাগারে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
● নিকোটিন, কফি ও অ্যালকোহল সন্ধ্যায় পরিহার করুন। এসব উত্তেজক দ্রব্য ব্যক্তিকে জাগ্রত রাখে। কফি পান করলেও ঘুমের আট ঘণ্টা আগে করতে হবে। কারণ, পান করার অনেকক্ষণ পর পর্যন্ত এর প্রভাব থাকে।
● প্রতিদিন অল্পবিস্তর ব্যায়াম করুন। প্রতিদিনের হালকা অ্যারোবিক ব্যায়াম আপনাকে একটা অচ্ছেদ্য ঘুম উপহার দিতে পারে। অ্যারোবিক ব্যায়াম হলো সেই ধরনের ব্যায়াম, যার ফলে হৃৎস্পন্দন দ্রুত হয় এবং শরীর ঘামতে শুরু করে। যেমন: জোরে হাঁটা, সাইকেল চালানো, দড়িলাফ, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা ইত্যাদি।
● সাধারণত রাতেই ঘুমাবেন। দুপুরের ঘুম কিন্তু রাতের বিশ্রামকে কেড়ে নিতে পারে। দুপুরে ভাতঘুম যদি নিতে হয়, তবে সেটি আধা ঘণ্টার বেশি নয়।
● আরামদায়ক ম্যাট্রেস ও নরম বালিশ বেছে নিন। যদি কেউ আপনার সঙ্গে শোয়, তবে দেখতে হবে দুজনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে কি না।
● শিশু বা পোষা প্রাণীর সঙ্গে একই বিছানায় ঘুম কখনোবা ব্যক্তির ঘুমের ব্যাঘাতের মূল কারণ হতে পারে।
● একই কথা প্রতি রাতে মনকে শোনান এখন সব বন্ধ করে আমি ঘুমাব। এটার পূর্বপ্রস্তুতি হতে পারে একটা সুন্দর গোসল বা বইপড়া বা হালকা গান শোনা। আলোটাও হতে হবে বন্ধ কিংবা স্নিগ্ধ।
● যখন আপনি ক্লান্ত ও ঘুমে ভেঙে পড়ছেন, তখনই আলো বন্ধ করুন এবং ঘুমাতে যান। যদি ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে ঘুম না আসে, তাহলে আবার কাজ করতে উঠে পড়ুন এবং ক্লান্ত হলে ঘুমাতে যান। ঘুম নিয়ে অযথা কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না।
●ঘুমের ওষুধ শুধু শেষ অবলম্বন হিসেবে রাখুন। চিকিৎসকের পরামর্শেই শুধু ঘুমের ওষুধ খেতে পারেন। কখনোই নিজে নিজে খাবেন না।
ভালো করে রাতে ঘুমাতে চান? কীভাবে তৈরি হবেন বিছানার জন্য?
আপনি ক্লান্ত, লম্বা একটা ঘুম দেবার জন্য শুয়ে পড়লেন বিছানায়। কিন্তু ঘুম কিছুতেই আসছে না । বহু লোকেরই এ সমস্যা হয়েছে কোন না কোন সময়।
সুতরাং প্রশ্ন হলো, কীভাবে নিজের মনকে চাপমুক্ত করে চমৎকার ঘুমের জন্য নিজেকে তৈরি করা যায়?
এটা কিন্তু খুব কঠিন কিছু নয়। ঘুমোতে যাবার কিছু নিয়ম-কানুন আছে যা সবাই শিখে নিতে পারে।
এখানে তেমনটি পাঁচটি টিপস দেয়া হলো, যা ভালো ঘুমের কিছু পরীক্ষিত কৌশল।
১. প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিন: আপনি কি সত্যি সত্যিই ক্লান্ত?
আপনি ভাবতে পারেন : এ আবার কেমন প্রশ্ন? আমি যে ক্লান্ত সেটা কি আমি নিজে বুঝবো না?
আসলে কথাটা হলো, আপনি যদি সত্যি বিছানায় যাবার জন্য তৈরি হন - তাহলে সহজেই ঘুম এসে যায়।
তবে একজনের কাছে যা 'স্বাভাবিক' ঘুমানোর সময় - অন্য কেউ কেউ সে সময়টায় ঘুমাতে পারেন না।
যদি আপনার এ সমস্যা থাকে - তাহলে দিনের বেলা যত বেশি সম্ভব সময় প্রাকৃতিক আলোর মধ্যে কাটাতে চেষ্টা করুন, এবং সেটা শুরু করুন ঘুম থেকে ওঠার সাথে সাথেই।
বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন যে এর ফলে রাত-জাগা লোকদের 'দেহ-ঘড়ি'কে আগেভাগে ঘুমানোর জন্য তৈরি করা যায়।
দিনের বেলা যথেষ্ট ব্যায়াম ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিছানায় যাবার আগের চার ঘণ্টার মধ্যে ব্যায়াম না করলেই ভালো। কারণ এর ফলে শরীরে যে এ্যাড্রিনালিন নি:সৃত হয় - তা হয়তো আপনাকে ঘুমোতে দেবে না।
আপনি যদি ছোট্ট শিশু না হন এবং আপনার কম ঘুম হয় - এমন সমস্যা থাকে, তাহলে দিনের বেলা - বিশেষ করে বিকেল ৪টার পর - না ঘুমানোর চেষ্টা করুন। এতে আপনার রাতে ঘুম হবার সম্ভাবনা কমে যেতে পারে।
২. আপনি কি খাচ্ছেন বা পান করছেন সেদিকে নজর দিন
প্রকৃতপক্ষে ভালো ঘুমের প্রক্রিয়া শুরু হয় বিছানায় যাবার সময়ের অনেক আগে। তাই ঘুমাতে যাবার অন্তত ৬ ঘণ্টা আগে থেকেই ক্যাফেইন আছে এমন কোন পানীয় পান করা বন্ধ করে দিন।
ক্যাফেইন এমন এক জিনিস যা আপনার শরীরে থাকে অন্তত ৯ ঘণ্টা। কাজেই ভালো করে ঘুমাতে চাইলে দুপুর ১২টার পর থেকেই চা, কফি এবং কোক-পেপসির মতো 'ফিজি ড্রিংকস' পান বাদ দেবার কথা ভাবুন।
অনেকেই খালি পেটে ঘুমাতে পারেন না। তবে একেবারে ভরপেট খেয়ে বিছানায় গেলেও ঘুমের অসুবিধা হতে পারে।
যদি পারেন তাহলে ঘুমের সময়ের প্রায় চার ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিন। এবং তাতে ভারী গুরুপাক খাবার বা চিনি-যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এতে ঘুম না হওয়া বা রাতে জেগে ওঠার সমস্যা কেটে যাবে।
এ্যালকোহল বা মদ্যপান আপনাকে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করতে পারে - কিন্তু আপনার সেই ঘুম খুব গভীর হবে না। যাকে বলে 'র্যাপিড আই মুভমেন্ট' বা 'আরইএম স্লিপ' - তা মানুষের স্মৃতি ও শিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং অগভীর ঘুমে তার ক্ষতি হয়।
তা ছাড়া মদ্যপানের ফলে শরীরে বেশি প্রস্রাব তৈরি হয়, তাই রাতে টয়লেটের জন্য ঘুম ভেঙে যাবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
Comments
Post a Comment